টাকা লেখো: সিয়াং-ফু ঘটনা।
প্রেক্ষাপট:
জাপান ইটালি ও জার্মানির সঙ্গে অ্যান্টি কমিন্টার্ন চুক্তি স্বাক্ষর (১৯৩৬ খ্রি.) করলে চিনের বুদ্ধিজীবী, ছাত্র, বণিক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ জাপানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সমগ্র চিনবাসীর কাছে লড়াইয়ের আবেদন জানায়। এই আবেদনে কমিউনিস্ট পার্টিসহ বিভিন্ন দল, গোষ্ঠী ও সেনারা সহমত পোষণ করলেও কুয়োমিনটাং দলের নেতা চিয়াং কাই-শেক ভিন্নমত পোষণ করেন। চিয়াং প্রথমে কমিউনিস্টদের দমন করে তারপর জাপানি বাহিনীর মুখোমুখি হতে চেয়েছিলেন। যার পরিণতি হিসেবে শেনসি প্রদেশে নিজের সেনাবাহিনীর হাতেই তিনি বন্দি হন, যা 'সিয়াং-ফু ঘটনা' নামে পরিচিত।
চিয়াং-কাই-শেষ ঘটনার বিবরণ:
চিনের কমিউনিস্টগণ নিজেদের উদ্যোগে 'ন্যাশনাল লিবারেশন', 'অ্যান্টি জাপানিজ অ্যাসোসিয়েশন', 'দ্য পিপলস অ্যান্টি-স্বাপানিজ। লিগ' এবং 'ন্যাশনাল স্যালভেশন সোসাইটি' গঠন করে। এরা চেয়েছিল নিজেদের মধ্যেকার দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জাপানিদের বিরদ্ধে লড়াই করতে। কিন্তু কমিউনিস্ট দমনের নীতিতে অটল চিয়াং চিনা গণবিক্ষোভকে তোয়াক্কা না করে উত্তর-পশ্চিমের কমিউনিস্ট ঘাঁটিগুলি ধ্বংসের লক্ষ্যে সেনাবাহিনী পাঠান। দুই সেনানায়ক চ্যাং সো লিয়াং ও ইয়াং হু চেং-এর নেতৃত্বাধীন সেনারা কমিউনিস্টদের দমন করতে ব্যর্থ হয়। সাম্যবাদীদের জাপানবিরোধী প্রচারে সহানুভূতিশীল হয়ে দুই সেনানায়ক যুক্তফ্রন্ট গঠনের পক্ষে মত দেন। এমতাবস্থায় সাম্যবাদীদের বিরুদ্ধে পরিচালিত সেনাডিয়ানকে উৎসাহিত করার জন্য চিয়াং-কাই-শেক উত্তর রণাঙ্গনের সদর কার্যালয় সিয়ানে গিয়ে পৌঁছোলে নিজেরই দুই সেনানায়কের হাতে বন্দি হন (১৯৩৬ খ্রি., ১২ ডিসেম্বর)।
দাবিপত্র চিয়াং-কে আট দফা শর্ত সম্বলিত এক দাবিপত্র দেওয়া হয়। বলা হয়, এই দাবিগুলি মেনে নিলে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হবে। দাবিগুলি ছিল— (i) চিয়াং-কাই-শেককে কমিউনিস্ট বিরোধী কার্যধারা বদ্ধ রেখে কমিউনিস্টদের সঙ্গে নিয়ে জাপ বিরোধী সংগ্রাম পরিচালনায় অংশগ্রহণ করতে হবে। (ii) সকল গৃহবিবাদের অবসানঘটাতে হবে। ও সাংহাইতে আটকে রাখা জাতীয়তাবাদী নেতাদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। (iv) সকল রাজনৈতিক, বন্দিদেরও মুক্তি দিতে হবে। (v) জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। ও সান ইয়াৎ-সেনের আদর্শ বাস্তবায়িত করতে হবে। (vi) দেশে সামরিক একনায়কত্বের পরিবর্তে গণতান্ত্রিক নীতি মেনে চলতে হবে। (vii) জাতীয় মুক্তির লক্ষ্যে, প্রতিটি দল ও গোষ্ঠীর পুনর্গঠন করতে হবে।
চিয়াং-এর মুক্তি :
কমিউনিস্ট নেতাদের একাংশ চিয়াং-এর বিচার ও হত্যা চাইলে মস্কো সংবাদপত্রগুলি চিয়াংঅপহরণের ঘটনার নিন্দা করে। চিয়াং-কাই-শেক আটদফা দাবি মেনে নিলে তাকে মুক্তি দেওয়া হয় (১৯৩৬ খ্রিডিসেম্বর)। চিনের জনমত যাতে সাম্যবাদীদের বিরুদ্ধে চালিত না হয় তার জন্য চিয়াংকে মুক্ত করে তাঁর নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট গঠন করার কথা বিবেচিত হয়।
উপসংহার:
সিয়াং-ফু ঘটনার পর চিয়াং-এর দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটে। তিনি কমিউনিস্ট দমন আন্দোলন বন্ধ করতে রাজি হন। কমিউনিস্টগণও চিয়াং-এর নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট গঠনে রাজি হয়ে যায়। দেশ গৃহযুদ্ধের হাত থেকে রক্ষা পায়। যুক্তফ্রন্ট ঐক্যবদ্ধভাবে জাপানি আগ্রাসন প্রতিরোধের সিদ্ধান্ত নেয়।
0 Comments
If you like the posts, you must comment. and if there is any problem , please let me know in the comments.