আত্মশক্তি আন্দোলন (Self Strengthening Movement ) :
চীনের আত্মশক্তি আন্দোলনের পটভূমি :
বিদেশি সাম্রাজ্যবাদীদের মৃগয়াভূমি হয়ে পড়েছিল চীন। শুভবুদ্ধিসম্পন্ন চীনারা উপলব্ধি করেছিল চীনকে শক্তিশালী করতে হলে চীনের আধুনিকিকরণের প্রয়োজনীয়তা সবচেয়ে জরুরি। বালক সম্রাট তুং-চির রাজত্বকালে চীনে পাশ্চাত্যের অনুকরণে কিছু সংস্কার ও আধুনিকীকরণের প্রচেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু বেশ কিছু রক্ষণশীল রাজকর্মচারী এই প্রচেষ্টাকে মানতে পারেননি। তাঁরা চীনকে আধুনিক শিল্প দ্বারা সমৃদ্ধিশালী করার বিরোধী ছিলেন। কিন্তু তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে এটাও অনুভব করেছিলেন যে চীনকে বিদেশিদের করাল গ্রাস থেকে বাঁচাতে হলে এবং চীনকে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করতে হলে চীনকে পাশ্চাত্য প্রযুক্তিবিদ্যার সাহায্য নিতে হবে। তাঁরা অনুভব করেছিলেন। পাশ্চাত্যশক্তি আজকে যে অপরাজেয় শক্তি হিসাবে বিশ্বের দরবারে নিজেকে জাহির করছে তার পিছনে রয়েছে প্রযুক্তি নির্ভর সামরিক শক্তি। তাঁরা এই উপলব্ধি থেকে এই সিদ্ধান্তে এসেছিলেন যে চীনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার জন্য বিদেশিদের প্রযুক্তিকে ব্যবহার করতে হবে। তবেই পাশ্চাত্য শক্তির আগ্রাসনকেপ্রতিহত করা যাবে। এই উদ্দেশ্যে চীনের নানা স্থানে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর বেশ কিছু অস্ত্র কারখানা নির্মিত হয়েছিল। সামরিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার জন্য আধুনিক প্রযুক্তিবিদ্যার প্রয়োগের প্রক্রিয়াই চীনের ইতিহাসে 'আত্মশক্তি আন্দোলন' নামে পরিচিত ।
চীনের আত্মশক্তি আন্দোলনের সূচনা :
আত্মশক্তি আন্দোলন শুরু হয়েছিল তুং-চি যুগে এবং চলেছিল ১৮৯৫ সাল পর্যন্ত। চীনা ভাষায় এই আন্দোলনের নাম ছিল জু-চিয়াং (Tru-Chiang)। ওয়ে ইউয়ান (Wei-Yuan)-এর মতে বর্বরদের শক্তি দ্বারাই বর্বরদের পরাজিত করতে হবে। একই ধরনের বক্তব্য রবীন্দ্রনাথের রচনায় পাওয়া যায়। রবীন্দ্রনাথও বলেছিলেনঃ ”রোপ যে শক্তিতে পৃথিবীতে সর্বজয়ী হয়ে উঠেছে, একমাত্র সেই শক্তি দ্বারাই তাকে ঠেকানো যায়। নইলে তার চাকার নীচে পড়তেই হবে এবং একবার পড়লে কোনোকালে আর উঠবার উপায় থাকে না ইমানুয়েল শ্য চীনের এই আত্মশক্তি আন্দোলনকে তিনটি পর্বে ভাগ করেছেন। তার মতে ১৮৬১ থেকে ১৮৭২ পর্যন্ত ছিল এই আন্দোলনের প্রথম পর্ব। ১৮৭২ থেকে ১৮৮৫ পর্যন্ত ছিল এই আন্দোলনের প্রথম পর্ব। ১৮৭২ থেকে ১৮৮৫ পর্যন্ত ছিল দ্বিতীয় পর্ব এবং ১৮৮৫ থেকে ১৮৯৫ পর্যন্ত ছিল এই আন্দোলনের অন্তিম পর্ব১৮৬০-এর দশক ছিল এই আন্দোলনের পটভূমি রচনায় উল্লেখযোগ্য সময়। চীনকে আধুনিক রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে তোলার এক সার্বিক প্রয়াস এই পর্বে লক্ষ করা গিয়েছিল। পাশ্চাত্য শক্তিবর্গ ও চীনা রাজপুরুষেরা যৌথভাবে চীনকে আধুনিক রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে তোলায় যত্নবান হয়েছিল। বিদেশিদের সাহায্যে এই সময়ে Imperial Maritime Customs বা রাজ সমুদ্রশুল্ক বিভাগ গড়ে উঠেছিল। বহির্বাণিজ্য থেকে চীন এইসময় প্রচুর অর্থ পেয়েছিল। এই সময়ে বিদেশিদের সঙ্গে চীনাদের সম্পর্ক বেশ ভালো হয়েছিল। চীনারা জাপানকে অনুসরণ করতে চেয়েছিল। জাপান আধুনিকীকরণকে বাস্তবায়িত করে উন্নতির যে চরম শিখরে উঠেছিল চীনা জনগণকে তাতে উৎসাহিত করেছি পিকিং শহরে বৈদেশিক দপ্তর সুংগলি ইয়ামেনের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। এই দপ্তর পাশ্চাত্য দেশের সাথে চীনের সম্পর্ককে নিয়ন্ত্রণ করেছি পাশ্চাত্য প্রযুক্তির প্রয়োগে চীনে আধুনিক যন্ত্রপাতি নির্মাণের ওপর অনেক আগে থেকেই গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছিল। এক্ষেত্রে লিন-সে-সুর উদ্যোগ বিশেষরূপে স্মরণীয়। তিনি ভারত, সিঙ্গাপুর, ম্যাকাও থেকে সে সব বিদেশি সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়েছিল সেগুলিকে চীনা ভাষায় অনুবাদ করার কথা বলেছিলেন। তাঁর উদ্যোগে ভ্যাট্রেলের আন্তর্জাতিক আইনের গ্রন্থ এবং মুরের Cyclopaedia of Geography কে চীনাভাষায় অনুবাদ করা হয়েছিল। তিনি ক্যান্টনের কমিশনার হয়ে ২০০টির বেশি বিদেশি বন্দুক কিনেছিলেন। কীভাবে বন্দুক তৈরি করা হয় সে সম্পর্কের বইগুলিকে তিনি অনুবাদ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। লিন-সে-সুর মতো ওয়েই ইউয়ানও পাশ্চাত্য সম্পর্কে অনেক তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন। চীনে বিদেশি ভাষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিশিক্ষার জন্য অনেক বিদ্যালয় গড়ে উঠেছিল। বিদেশ থেকে যন্ত্রপাতি কেনার জন্য বিদেশে প্রতিনিধি পাঠানো হয়েছিল। প্রথম পর্বে আত্মশক্তি বৃদ্ধি আন্দোলনের মধ্যে মূল বিষয় ছিল সামরিক শক্তিকেউন্নত করা। পাশ্চাত্য শক্তির অনুকরণে ১৮৬১ সালে তিয়েনসিনে চীনা সৈন্যদের সামরিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল যা পিকিং ফিল্ড ফোর্স নামে পরিচিত। যুবরাজ কুং ও চীনা সামরিক পরিষদের সদস্য ওয়েন সিয়াং এই সেনা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৮৬১ সালে সেং-কুয়ো-ফান আন কিং-এ একটি আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র নির্মাণের কারখানা স্থাপন করেন। এই কারখানায় কার্তুজ ও গোলাবারুদ তৈরি হত। ১৮৬২ সালে লি-হুং-চ্যাং সাংহাইতে একটি গোলাবারুদ কারখানা স্থাপন করেন। ১৮৬৪ সালে সু-চাও এ সমরাস্ত্র তৈরি কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ফুচাও বন্দরে নির্মিত হয়েছিল জাহাজ নির্মাণ কারখানা। এখান থেকে প্রচুর জাহাজ নির্মিত হয়েছিল। এই কারখানার যন্ত্রপাতি এসেছিল ফ্রান্স থেকে। এই কারখানার সঙ্গে দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল। একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শেখানো হত জাহাজ নির্মাণ প্রযুক্তি ও ফরাসি ভাষা এবং অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শেখানো হত নৌবিদ্যা ও ইংরেজি ভাষা। ফুচাও বন্দরে নির্মিত এই কারখানাকে তাই আত্মশক্তি বৃদ্ধি আন্দোলনের এক গুরুত্বপূর্ণ দিক বলা চলে। নানকিং-এর গভর্নর জেনারেল হিসাবে লি-হুং-চ্যাং সেখানে একটি অস্ত্র কারখানা স্থাপন করেছিলেন। চুং-ই তিয়েনমেন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যন্ত্র তৈরির কারখানা। টাকুতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল দুর্গ। বিদেশে চীনা ছাত্রদের পাঠানো হয়েছিল। প্রাকৃতিক সম্পদকে বিশেষ করে লৌহ ও কয়লাকে উত্তোলন করার ব্যবস্থাও হয়েছি।
চীনের আত্মশক্তি আন্দোলনের প্রথম পর্ব:
প্রথম পর্বে আত্মশক্তি আন্দোলনের পরিণতিতে যে সব শিল্প প্রতিষ্ঠান, কলকারখানা প্রভৃতি নির্মিত হয়েছিল তাতে কতকগুলি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষণীয়। এই পর্বে বেশি পরিমাণে সামরিক শিল্প গড়ে তোলার প্রয়াস দেখা যায়। এই ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠান তৈরিতে সরকারি উদ্যোগ ছিল। কিন্তু এই শিল্প প্রতিষ্ঠানের পরিচালকরা ছিলেন পুরোনো পন্থী। তারা ঐতিহ্যের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। শিল্প প্রতিষ্ঠান নির্মাণের সময় বিদেশিদের সাহায্য সহযোগিতা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাদের যোগ্যতাকে বিচার করা হয়নি। বিদেশি হলেই যে তার সব বিষয়ে গভীর জ্ঞান থাকবে তা ঠিক নয়। এই সত্য বা বাস্তব কথাকে চীনা রাজপুরুষরা উপলব্ধি করতে পারেননি। ফলে দেখা যায় পেশাগত দিক দিয়ে ডাক্তার ছিলেন হ্যালিডে ম্যাকার্টনি (Halliday Macartney)। তাকে নানকিং-এ অস্ত্রাগার গড়ে তোলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। ফুচাও জাহাজ নির্মাণ কারখানা তদারকি করতেন জিকুয়েল এবং আইগুবেল নামক দুইজন ফরাসি। অথচ তাদের জাহাজ নির্মাণের কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না। চীনে প্রতিষ্ঠিত কারখানগুলো থেকে যেসব অস্ত্রশস্ত্র ও জাহাজ নির্মিত হয়েছিল সেগুলি গুণগত দিক দিয়ে বিদেশিদের থেকে অনেক নিম্নমানের ছিল। এছাড়া এইসব কারখানাগুলোতে শাসকদের অপ্রতিহত প্রাধান্য ছিল। পরিণামে চীনে আঞ্চলিকতা বৃদ্ধিপেয়েছিল। জাতীয় স্তরে কোনো ঐক্য বা সমঝোতা তৈরি হয়নি। আমলাতান্ত্রিক অদক্ষতা, সরকারি স্বজনপোষণ, বিদেশিদের ওপর মাত্রাতিরিক্ত নির্ভরতা প্রথম পর্বের আত্মশক্তি বৃদ্ধির আন্দোলনকে দুর্বল করে দিয়েছিল।
চীনের আত্মশক্তি আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্ব:
আত্মশক্তি বৃদ্ধির দ্বিতীয় পর্বে সামরিক শক্তির পরিবর্তে সম্পদ বৃদ্ধির উপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। চীনারা তখন উপলব্ধি করেছিলেন সম্পদ হল শক্তির আসল উৎস।শক্তিশালী হওয়ার প্রধান শর্ত হল সম্পদ। চীনারা অনুভব করেছিলেন আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার খরচ অনেক বেশি। কেননা আধুনিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও শিল্প উদ্যোগের প্রয়োজন হয়। ১৮৭৬ সালে লি-হং-চ্যাং বলেছিলেন “China's chronic Weakness Stems from poverty" অর্থাৎ চীনের দীর্ঘস্থায়ী দুর্বলতার উৎস হল তার দরিদ্রতা। তাই এই পর্বে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে সঙ্গে লাভজনক শিল্প প্রতিষ্ঠার দিকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। বিশেষ করে জাহাজ নির্মাণ, রেলপথ নির্মাণ, খাল খনন, টেলিগ্রাফ ব্যবস্থার প্রবর্তন প্রভৃতিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছি।
চীনের আত্মশক্তি আন্দোলনের সরকারি উদ্যোগে গঠিত শিল্প প্রতিষ্ঠান :
এই সময় সরকারি উদ্যোগে যেমন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল তেমনি বেসরকারি উদ্যোগেও কার্যকর হয়েছিল। বেসরকারি উদ্যোগের ক্ষেত্রেও সরকারের নিয়ন্ত্রণ ছিল। এই ধরনের বেসরকারি উদ্যোগগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল : চায়না মার্চেন্টস্ স্টিম নেভিগেশন কোম্পানি (China Merchants Steam Navigation Com pany), কাইপিং কোল মাইনস্ (Kai-ping Coal Mines), সাংহাই কটন ক্লথ মিলস (Sanghai Cotton Cloth Mill) এবং ইম্পেরিয়াল টেলিগ্রাফ এ্যাডমিনিষ্ট্রেশন (Imperial Telegraph Administration)। এইসব কোম্পানিগুলোর মূলধন সরবরাহকারী ছিল বেসরকারি বণিকরা। এইসব কোম্পানিগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করত সরকারি আমলারা। ফলে সরকারি আমলাদের অদক্ষতা, দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের পরিণতিতে এইসব শিল্প উদ্যোগ তেমন ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারেনি।
এইসময় আত্মশক্তি বৃদ্ধি আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন লি-সুপ্ত চ্যাঙ। তিনি ছিলেন রাজমাতা যুশির অনুগত রাজকর্মচারী। এই পর্বে চীনে যেসব প্রকল্প রূপায়িত হয়েছিল সেগুলি হল : কাইপিং-এ লৌহখনি উত্তোলন, তিয়েন সিঙে নৌপ্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন, টেলিগ্রাফ লাইন প্রবর্তন, পোর্ট আর্থারে জাহাজ শিল্প স্থাপন, সেচওয়ানে যন্ত্র নির্মাণ কারখানা, কানসুতে বস্ত্র শিল্পের প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি। এই সময়ে বহু চীনা ছাত্র বিদেশে পড়াশুনার জন্য গিয়েছিলে।
চীনের আত্মশক্তি আন্দোলনের তৃতীয় পর্ব:
আত্মশক্তি বৃদ্ধি আন্দোলনের তৃতীয় পর্বে সামরিক ও নৌশিল্প স্থাপনের উপর গুরুত্ব যেমন ছিল তেমনি হালকা ও মাঝারি শিল্প স্থাপনের উপর জোর দেওয়া হয়েছিল। ১৮৮৫ সালে Board of Admirality গঠিত হয়েছিল। ১৮৮৮ সালে পেইয়াং নৌবহর গঠিত হয়েছিল। এইসময় বহু বস্ত্রশিল্প নির্মিত হয়েছিল। এইসময় পর্বেও লি-হুং-চ্যাঙের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকলেও উহান প্রদেশের গভর্নর জেনারেল( চীন ও জাপান (চট্টো.)-৭ন) চ্যাং-চি-তুং এবং নানকিং-এর গভর্নর জেনারেল লিউ-বুন-ই-এর ভূমিকাও সমানভাবে উজ্জ্বল ছিল। ১৮৮৯ সাথে চ্যাং-চি-তুং ক্যান্টনে একটি বস্ত্রকল ও লৌহ কারখানা স্থাপন করেন। ১৮৯০ সাথে তিনি তা-ইয়েতে লৌহখনি, হ্যান-ইয়াং-এ লৌহ কারখানা এবং পিং-সিয়াং এ কয়লাখনি উত্তোলন করেন। ১৮৯১ সাল লি-হং-চ্যাং লুচাং এ কাগজের কল এবং কিয়েওচাও লৌহ কারখানা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ১৮৯৪ সালে সরকার ও বণিকদের যৌথ উদ্যোগে পেতে দেশলাই কারখানা গড়ে উঠেছিল। এখানে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বস্ত্র কারখানাও স্থাপিত হয়েছিল।
আত্মশক্তি আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণ:
আধুনিকীকরণের মাধ্যমে চীনকে শক্তিশালী করা ছিল আত্মশক্তি আন্দোলনের প্রধান উদ্দেশ্য। কিন্তু প্রশ্ন হল আত্মশক্তি আন্দোলনের এই উদ্দেশ্য কি পূরণ হয়েছিল? বিষয়টিকে যদি নিরপেক্ষভাবে ব্যাখ্যা করা যায় তাহলে দেখা যাবে এই উদ্দেশ্য পূরণ হয়নি। চীন যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই থেকে গিয়েছিল।
আত্মশক্তি আন্দোলনকারীরা পাশ্চাত্যের অনুকরণে চীনকে গড়তে চেয়েছিলেন। কিন্তু একাজ করতে গেলে চীনের ঐতিহ্যগত রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জীবনচর্চার আমূল সংস্কার করা দরকার ছিল। চীনাদের মনে এই প্রতার দৃঢ়ভাবে প্রোথিত ছিল যে চীনা সংস্কৃতি পাশ্চাত্য সংস্কৃতি অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। দেশের আর্থ সামাজিক কাঠামোর কোনো মৌলিক সংস্কার না করে তাঁরা অক্ষভাবে পাশ্চাত্য দেশের অনুকরণে চীনকে আধুনিক শিল্পোন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে গিয়েছিলেন। পরিণামে তাঁরা ব্যর্থ হয়েছিলেন।
চীনা রাষ্ট্রনায়কদের চিন্তাভাবনা ছিল অগভীর। পাশ্চাত্যের জ্ঞান বিজ্ঞান সম্পর্কে তাদের ধারণা ছিল অস্বচ্ছ। পাশ্চাত্য সংস্কৃতি, আইন, দর্শন ইত্যাদি বিষয়ে তাঁদের কোনো স্পষ্ট জ্ঞান ছিল না। শিল্পবিপ্লব সম্পর্কে তাদের কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। অস্পষ্ট ধারণা নিয়ে তারা পাশ্চাত্যের অনুকরণে শিল্প স্থাপন করতে গিয়ে তাল হারিয়ে ফেলেছিলেন। তাদের প্রচেষ্টায় যেসব শিল্প স্থাপিত হয়েছিল তাদের ভিত্তি সবল ছিল না। সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলি তাদের নিজেদের স্বার্থে চীনের শিল্পায়নকে নিয়ন্ত্রণে রেখে ছিল। এইসব শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে যেসব পণ্য সামগ্রী বের হয়েছিল। সেগুলি গুণমানের দিক দিয়ে নিম্ন মানের ছিল। এর পরিণতিতে চীনের শ্যাম ও কুল দুইই চলে গিয়েছিল। বিদেশিদের কাছে ঋণের ফাঁদে চীন জড়িয়ে পড়েছিল। শিল্প কলকারখানা প্রতিষ্ঠা করতে গেলে পর্যাপ্ত পুঁজির দরকার। উন্নত দেশগুলোতে এই পুঁজি আসে কৃষি ও বাণিজ্য থেকে। কিন্তু সেই সময়ে চীন ছিল একটি দরিদ্র দেশ। তার কৃষিতে আধুনিকীকরণ হয়নি। প্রযুক্তির প্রয়োগ কৃষিক্ষেত্রে হয়নি। কনফুসীয় ঐতিহ্যের বেড়াজালে আবদ্ধ চীনে বাণিজ্য ছিল অবহেলিত। স্বাভাবিক কারণে পুঁজির অভাব চীনের শিল্পায়নের সব প্রচষ্টাকে ব্যর্থ করেছিল। এই আন্দোলনে চীনের সাধারণ মানুষের কোনো সক্রিয় ভূমিকা ছিল না। কোনো প্রচেষ্টা সাফল্যমণ্ডিত তখনই হয় যখন সকল শ্রেণীর সমর্থন ও সহযোগিতা কার্যকর থাকে। চানের ক্ষেত্রে তা হয়নি। চীনে শিল্পায়নের এই প্রচেষ্টা ওপর থেকে সাধারণ মানুষের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সাধারণ মানুষ এই শিল্পায়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে নিজেকে শামিল করার কোনো প্রয়াস দেখায়নি। যা জাপানে হয়েছিল চীনে তা কার্যকর হয়নি। জাপানে মেইজি রেস্টোরেশন ও তার সূত্র ধরে যে আধুনিকীকরণ হয়েছিল তাতে সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছিল। ফলশ্রুতিতে অতি দ্রুতহারে জাপান পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্পোন্নত দেশ হিসাবে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিল। কিন্তু চীনের শাসকবর্গ জাপানের মডেলকে অনুসরণ করতে পারেনি। চীনের রক্ষণশীল নেতৃত্ব বণিক শ্রেণীকে পর্যন্ত অবজ্ঞা করেছিল। তাদের শ্রেণী স্বার্থকে বজায় রাখার জন্য সর্ববিধ উদ্যোগ নিয়েছিল। চীনের নেতৃত্ববর্গ ছিল দুর্নীতিপরায়ণ। বিশেষ করে এই আত্মশক্তি আন্দোলনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব ছিলেন লি-সুং-চা। তিনি নিজেই ছিলেন দুর্নীতিপরায়ণ। সুযোগসন্ধানী এই রাজনীতিবিদ নিজের আখেরকে বেশ ভালোই গুছিয়েছিলেন। মৃত্যুকালীন অবস্থায় তিনি তাঁর উত্তরাধিকারদের জন্য ৪০ মিলিয়ন টেইল মূল্যের ব্যক্তিগত সম্পত্তি জমিদারি রেখে গিয়েছিলেন। স্বাভাবিক কারণে এই ধরনের দুর্নীতিপরায়ণ রাষ্ট্রনীতিবিদদের পরিচালনায় আত্মশক্তি বৃদ্ধি আন্দোলন পরিণামে যে ব্যর্থ হবে তাতে কোনো সন্দেহ ছিল না।
আত্মশক্তি আন্দোলনের সময়ে শিল্প স্থাপনের যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল তার মধ্যে কোনো সমন্বয় ছিল না। জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে শিল্প স্থাপনের প্রয়াস ছিল না। বিশাল চীনা সাম্রাজ্যে ইতস্তত বিক্ষিপ্তভাবে শিল্প গড়ে উঠেছিল। এই শিল্প সংস্থাগুলোতে আঞ্চলিক ও সামন্ততান্ত্রিক বৈশিষ্ট্য পূর্ণমাত্রায় প্রকট ছিল। বিভিন্ন আঞ্চলিক নেতা নিজেদের উদ্যোগে যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছিলেন সেগুলিতে তাদের ছিল অপ্রতিহত প্রাধান্য। উদাহরণ দিয়ে বলা যায় লি-হুঙ-চ্যাঙের নেতৃত্বে যেসব অস্ত্রাগার নির্মিত হয়েছিল সেগুলিতে ছিল তাঁর সীমাহীন প্রভাব। ফলস্বরূপ দেখা যায় যে আত্মশক্তি আন্দোলন চীনের জাতীয় স্বার্থরক্ষা করার পরিবর্তে আঞ্চলিক নেতাদের স্বার্থকে রক্ষা করেছিল। আঞ্চলিক নেতাদের মধ্যেও ঐক্য ছিল না। এমনকি বিদেশি আক্রমণের সময়ও তারা পারস্পরিক বিভেদ ভুলে নিজেদের মধ্যে ঐক্যকে আনতে পারেনি। পরিণামে চীনের লজ্জাজনক পরাজয় হয়েছিল বিশেষ করে জাপানের কাছে।
চীনের আত্মশক্তি আন্দোলনের ব্যর্থতার পিছনে বিদেশি সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এই সময়ে চীনের অভ্যন্তরে বিদেশি সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলির হস্তক্ষেপ মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। বিদেশি সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলি চীনকে গ্রাস করতে উদ্যোগী হয়েছিল। সাম্রাজ্যবাদী জাপান চীনকে গ্রাস করার জন্য ১৮৭৪ সালে ফরমোসা দখল করেছিল। ১৮৭৫ সালে ইংল্যান্ড উনানকে উন্মুক্ত করার প্রয়াসী হয়েছিল। ফ্রান্সচীনের করদ রাজ্য আন্নামকে দখল করেছিল। ১৮৯৪-৯৫ সালে জাপান চীনকে আক্রমণ করে চীনের মর্যাদাকে ধূলিসাৎ করেছিল। লজ্জাজনক শিমোনোসিকি চুক্তি স্বাক্ষর করে চীন তার মর্যাদা হারিয়েছিল। প্রচুর অর্থ চীন ক্ষতিপূরণ হিসাবে দিতে বাধ্য হয়েছিল। পরিমাণে চীনকে আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হতে হয়েছিল। এই আর্থিক সংকট চীনের আত্মশক্তি আন্দোলনকে ব্যর্থ করে দিয়েছিল।
এই আন্দোলনের ব্যর্থতার আর এক কারণ হল চীনা জনগণের সামাজিক মনস্তাত্ত্বিক জড়তা। অধিকাংশ চীনারা ছিলেন রক্ষণশীল। তাঁরা বিদেশিদের সবকিছুকে ভালো চোখে দেখতেন না। তাঁদের এই মনোভাব আত্মশক্তি আন্দোলনে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছিল। বিদেশিদের সহযোগিতায় আধুনিকীকরণের এই প্রয়াসকে সাধারণ চীনা জনগণ সন্দেহের চোখে দেখেছি।
এই আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে মার্কসবাদী ঐতিহাসিকদের বক্তব্য হল এই আন্দোলনের প্রত্যেকটা পর্বে সহজাত স্ববিরোধিতা কার্যকর ছিল। এই আন্দোলনের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা ছিলেন ঐতিহ্যশালী কনফুসীয় চিন্তার ধারক। এই রক্ষণশীল নেতারা অনগ্রসর কৃষিভিত্তিক আর্থসামাজিক পরিকাঠামোয় আধুনিক পুঁজিবাদী শিল্প গড়ে তুলতে গিয়ে নিজেদের ব্যর্থতা ডেকে এনেছিলেন। তাঁরা উপলব্ধি করতে পারেননি সামন্ততান্ত্রিক কাঠামোকে বজায় রেখে পুঁজিবাদের বিকাশ ঘটানো সম্ভব নয়। সব থেকে বড়ো কথা এই রক্ষণশীল নেতাদের শিল্পবিপ্লব সম্পর্কে কোনো ধারণা ছিল না। চীনের সামাজিক পরিবেশ শিল্পায়নের উপযোগী ছিল না। সেজন্য এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছি।
সমালোচকরা বলে থাকেন আত্মশক্তি আন্দোলনকারীরা চীনকে আধুনিক রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে তুলতে চাননি। দেশকে আধুনিক রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে তোলার জন্য যে ধরনের দূরদর্শিতার দরকার ছিল তার অভাব তখনকার নেতৃত্বের মধ্যে ছিল। উদাহরণ দিয়ে বলা যায় আঞ্চলিক নেতারা ভারী বা বড়ো শিল্প গড়ে তোলার জন্য দীর্ঘমেয়াদি কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করেননি। শিল্পোন্নত দেশগুলোতে বৃহৎ শিল্পের পাশাপাশি সহযোগী শিল্প বা Subsidiary Industry গড়ে ওঠে। কিন্তু চীনের ক্ষেত্রে তা হয়নি। বরং চীনে দেখা গিয়েছিল শিল্পের জন্য আবশ্যিক উপাদান কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি সব বিদেশ থেকে আনা হয়েছিল ফলস্বরূপ শিল্পায়নের পথে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়েছিল। শিল্পের জন্য যে প্রযুক্তির দরকার তার অভাব চীনে ছিল। যদিও এই অভাবকে পূরণ করার জন্য চীনা কর্তৃপক্ষ বেশ কিছু স্কুল তৈরি করেছিলেন। কিন্তু উপযুক্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকের অভাবে এই উদ্যোগ নষ্ট হয়েছিল। এসবের পরিণতিতে আত্মশক্তি আন্দোলনের মূল লক্ষ্য পূরণ হয়নি।
এইভাবে দেখা যায় যে চীনে যে আত্মশক্তি আন্দোলন চীনকে শক্তিশালী করার। জন্য শুরু হয়েছিল তা কঠিন বাস্তবের সামনে পড়ে ব্যর্থ হয়েছিল। এই ব্যর্থতার পিছনে কিন্তু বিদেশি পণ্যের প্রতিযোগিতাকে দায়ী করা যাবে না। যদিও বিদেশি। পণ্যের সঙ্গে চীনে উৎপাদিত পণ্যের গুণগত মানের ফারাক অনেক ছিল। এই আন্দোলনের ব্যর্থতার পিছনে যে কারণগুলি বেশি দায়ী ছিল সেগুলি হল চীনের পরিকাঠামোগত দুর্বলতা, সামাজিক ও মানসিক জড়তা, রক্ষণশীলতা, নেতৃত্ববর্গের অদূরদর্শিতা, কেন্দ্র ও প্রাদেশিক সরকারের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ইত্যাদি।
আত্মশক্তি আন্দোলন পরিণামে ব্যর্থ হয়েছিল এতে কোনো সন্দেহ নেই। চীনের ইতিহাসে এই আন্দোলনের কি কোনো প্রভাব নেই? উত্তরে বলা যায় এই আন্দোলন ব্যর্থ হলেও পরবর্তী চীনের ইতিহাসের উপর গভীর প্রভাব বিস্তার করেছিল। এই আন্দোলনের হাত ধরে চীন ধীরে ধীরে তার মধ্যযুগীয় মানসিকতা থেকে মুক্তি পেয়েছিল। নিজের শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে চীনের যে এতদিন এক অন্ধ মোহ ছিল তা কেটে গিয়েছিল। চীন বিশ্বাস করেছিল পশ্চিমি দুনিয়া প্রযুক্তি ও শিল্পায়নের দিক দিয়ে চীনের থেকে অনেক এগিয়ে গেছে। এই বিদেশি শক্তির মোকাবিলা করতে হলে বিদেশিদের মতো চীনকেও শক্তিশালী হতে হবে। এই মানসিকতা থেকে চীন বিদেশিদের অনুকরণে শিল্পায়নের পথে হেঁটেছিল। চীনে আধুনিক শিল্পায়নের ভিত্তি রচিত হয়েছিল। চীনের বিভিন্ন প্রান্তে নতুন শিল্প, কলকারখানা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল। পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছিল। শিল্পায়নের সাথে সাথে নগরায়ণ শুরু হয়েছিল। সাংহাই, নানকিং, ফুচাও, ক্যান্টন প্রভৃতি এলাকায় জনবহুল আধুনিক নগরের পত্তন হয়েছিল। এইসব শহরে বিদেশিরা বসবাস করত। এছাড়া শিল্পায়নের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল যে সব চীনা জনগণ তারাও গ্রাম ছেড়ে এইসব শহরে চলে এসেছিল। এইসব চীনাদের সঙ্গে বিদেশিদের সম্পর্ক ভালো ছিল। পরিণতিতে এইসব শহরে চীনারা বিদেশি সংস্কৃতিকে গ্রহণ করেছিল। তারা নানা কাজে বিদেশে যেতে আরম্ভ করেছিল। এইসব নবা সংস্কৃতির ধারকেরা চীনের পরিবর্তনের জন্য সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। তা
চিনের সমাজ ছিল কৃষিভিত্তিক। চীনের অধিকাংশ মানুষ কৃষির সঙ্গে জড়িত ছিল। কিন্তু কৃষি ছিল অলাভজনক। কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ সেই অর্থে হয়নি। চীনে শিল্প কলকারখানা গড়ে উঠলে কৃষকরা তাদের দীর্ঘদিনের পেশা ছেড়ে শ্রমিক হিসাবে নতুন জীবন শুরু করেছিল। ফলস্বরূপ চীনে শ্রমিক শ্রেণীর জন্ম হয়েছিল। যদিও এদের অবস্থা খুব ভালো ছিল তা বলা যাবে না।
এইভাবে দেখা যায় যে আত্মশক্তি আন্দোলন ব্যর্থ হলেও চীনের ভবিষ্যত ইতিহাসের ওপর এই আন্দোলনের সুগভীর প্রভাব পড়েছিল। চীনের আকাশে পরবর্তীকালে যেসব নতুন সম্ভাবনার জন্ম হয়েছিল তার সুতিকাগার ছিল আত্মশক্তি আন্দোলন।
*****টোকুগাওয়া শোগুনতন্ত্রের পতনের কারণ/ what was the main downfall of the tokugawa shogunate.
0 Comments
If you like the posts, you must comment. and if there is any problem , please let me know in the comments.