Q) সিসেরোর রাষ্ট্রদর্শন সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।* অথবা, রাষ্ট্রদর্শন ও রাষ্ট্রীয় আইনবিধি সংক্রান্ত সিসেরোর অভিমত আলোচনা করো।

 Q) সিসেরোর রাষ্ট্রদর্শন সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।*  অথবা, রাষ্ট্রদর্শন ও রাষ্ট্রীয় আইনবিধি সংক্রান্ত সিসেরোর অভিমত আলোচনা করো।

Q) সিসেরোর রাষ্ট্রদর্শন সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।*  অথবা, রাষ্ট্রদর্শন ও রাষ্ট্রীয় আইনবিধি সংক্রান্ত সিসেরোর অভিমত আলোচনা করো।


Answer: রোমের শ্রেষ্ঠ দার্শনিক, রাজনীতিবিদ, আইনজ্ঞ, বাগ্মী এবং রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ ছিলেন মার্কাস টুল্লিয়াস সিসেরো (Marcus Tullius Cicero)। সুপণ্ডিত সিসেরোর বিভিন্ন বিষয়ে অভিজ্ঞতা থাকলেও আইন ও রাষ্ট্রনীতিচর্চায় বিশেষ কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন। De Republica (ইংরেজিতে On the Republic) এবং De Legibus (ইংরেজিতে On the Laws) গ্রন্থ দুটি থেকে তাঁর রাষ্ট্রচিন্তার সম্যক পরিচয় মেলে।


# সিসেরোর রাষ্ট্রদর্শন: 

প্লেটো, অ্যারিস্টটল, পলিবিয়াস ও স্টোয়িকদের মতবাদ দ্বারা সিসেরোর রাষ্ট্রদর্শন বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়েছিল। প্লেটোর ন্যায় সিসেরোও তাঁর গ্রন্থ De Republica-তে এক আদর্শ রাষ্ট্রব্যবস্থার অনুসন্ধানে ব্রতী হয়েছিলেন।*


🎲 রাষ্ট্রের উৎপত্তি: 

সিসেরো বিশ্লেষণ দ্বারা দেখিয়েছেন যে, রাষ্ট্র একদিনে গড়ে ওঠেনি, বিবর্তনের মাধ্যমে মানুষের প্রয়োজনে রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল। সিসেরোর রাষ্ট্রব্যবস্থার দুটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হল ন্যায়বিচার ও যথার্থ আইনের প্রতি আনুগত্য।


🎲 শাসনব্যবস্থার স্বরূপ : 


সিসেরোর মতে, রাজতন্ত্র, অভিজাততন্ত্র ও গণতন্ত্র—এই তিন ধরনের শাসনব্যবস্থাই রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে এগুলোর প্রতিটিতে কিছু সমস্যা রয়েছে। রাজতন্ত্রে রাজার একক শাসনে ভালো শাসন হতে পারে, কিন্তু সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণের সুযোগ থাকে না। অভিজাততন্ত্রে ধনী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা শাসন করেন, তবে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব বা পক্ষপাতিত্ব দেখা দিলে শাসনব্যবস্থার স্বচ্ছতা নষ্ট হয়। গণতন্ত্রে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে, কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভুল হলে তা অপশাসনে পরিণত হতে পারে। সুতরাং, একটি আদর্শ শাসনব্যবস্থার জন্য সঠিক ভারসাম্য প্রয়োজন।


🎲 মিশ্র সরকার:

 সিসেরোর মতে, সব সরকারের ভালো দিক ও খারাপ দিক দুই-ই আছে। সর্বশ্রেষ্ঠ শাসনব্যবস্থা হল- রাজতন্ত্র, অভিজাতন্ত্র ও গণতন্ত্রের ভালো দিকগুলি নিয়ে গঠিত এক মিশ্র শাসনব্যবস্থা। আবার এই শাসনব্যবস্থা যাতে কোনও একদিকে ঝুঁকে না পড়ে সেই জন্য তিনি নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য বজায় রাখার কথা বলেছেন।


🎲 আইন সংক্রান্ত ধারণা : 

সিসেরো তাঁর "De Legibus" গ্রন্থে দুটি আইনের কথা বলেন: প্রাকৃতিক আইন ও রাষ্ট্রীয় আইন। তাঁর মতে, প্রাকৃতিক আইন ঈশ্বর কর্তৃক নির্ধারিত, যা শাশ্বত, অভ্রান্ত ও অপরিবর্তনীয় এবং রাষ্ট্রীয় আইনকে এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। প্রাকৃতিক আইনবিরোধী কোনো রাষ্ট্রীয় আইন বৈধ নয়। রাষ্ট্রীয় আইন মানুষের কল্যাণে তৈরি হয়, এবং শাসককে উভয় ধরনের আইন মেনে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হবে, নাগরিকদেরও আইনের প্রতি আনুগত্য রাখা উচিত।


🎲 ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা :

সিসেরো তাঁর ডি রিপাবলিকা গ্রন্থে ন্যায়বিচারকে জাতির মেরুদণ্ড বলে অভিহিত করেছেন। তাঁর মতে, প্রাকৃতিক আইন ও মনুষ্যসৃষ্ট আইন সঠিকভাবে মানবকল্যাণে প্রয়োগ করতে পারলেই সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সম্ভব, যা বিশৃঙ্খলা রোধ করে।


🎲 প্রাকৃতিক সাম্যের নীতি: 

সিসেরো প্রাকৃতিক সাম্যনীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। তাঁর মতে, প্রকৃতি সকল মানুষকেই সমান অধিকার প্রদান করে। সিসেরো সাম্যনীতিকে মানবজীবন ও রাষ্ট্রীয় জীবনের অপরিহার্য শর্ত বলে মনে করেন।


🎲 বিশ্বনাগরিকত্ব: 

সিসেরোর মতানুসারে, সকল মানুষই সর্বজনীনপ্রাকৃতিক আইনের অধীন। সমগ্র বিশ্বকে তিনি একটি রাষ্ট্র হিসেবে কল্পনা করেছেন। সিসেরো পৃথিবীর সমস্ত রাষ্ট্র নিয়ে এক রাষ্ট্র সমবায় বা কমনওয়েলথ গঠনের আদর্শ তুলে ধরেন। এই রাষ্ট্রের নাগরিকরা বিশ্বনাগরিক হিসেবে সমান সুযোগসুবিধা পাবে এবং প্রত্যেকেই প্রাকৃতিক আইন মেনে চলবে।


🎲 আদর্শ রাষ্ট্রের ধারণা:

 সিসেরো আদর্শ রাষ্ট্রব্যবস্থাকে কোনও একটি ক্ষুদ্র গণ্ডিতে আবদ্ধ না রেখে বিশ্বসমাজের বৃহত্তম পরিসরে প্রতিষ্ঠা করতে উদ্যত হয়েছিলেন। তাঁর মতে, একটি আদর্শ রাষ্ট্রব্যবস্থা নাগরিকদের সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক চাহিদা বিকাশের উপযোগী ক্ষেত্র হিসেবে গড়ে উঠবে।

🎲 নাগরিকদের কর্তব্য:

 আদর্শ নাগরিকেরা হবে সত্যনিষ্ঠা, ন্যায়পরায়ণতা-সহ বিভিন্ন সদগুণের অধিকারী। তাঁরা অন্যের ক্ষতি ও পরের সম্পত্তি হরণ করবে না, কেউ বিপদে পড়লে সাহায্য করবে এবং জনসাধারণের মঙ্গলের জন্য কাজ করবে। তাছাড়া নাগরিকদের গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য হল তারা পিতৃভূমি রক্ষার জন্য যুদ্ধ করবে।


🎲 জনকল্যাণসাধন: 

রাষ্ট্র বিষয়ে সিসেরোর চিন্তা প্রধানত জনগণের মঙ্গলচিন্তাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে। তাঁর মতে, মানুষের মঙ্গলের উদ্দেশ্যেই রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় আইনও মানুষের কল্যাণসাধনের জন্যই রচিত হয়। তাই স্বৈরাচারী ব্যবস্থা জনকল্যাণকর রাষ্ট্র গঠনের ক্ষেত্রে অনুপযুক্ত।

🎲 মূল্যায়ন:

সিসেরোর রাষ্ট্রদর্শন নানাভাবে সমালোচিত হয়েছে। প্রসঙ্গত বলা যায়, সমকালীন রোমের বাস্তব রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপট বিচার করলে সিসেরোর চিন্তায় মৌলিকত্বের ছাপ ছিল খুবই সামান্য। তাছাড়া অনেকে মনে করেন, সিসেরো যে নীতি ও পদ্ধতি রোমে প্রয়োগ করতে চেয়েছিলেন তার সবকিছু বাস্তবসম্মত ছিল না। উক্ত সমালোচনা সত্ত্বেও ন্যায় প্রতিষ্ঠা, আদর্শ রাষ্ট্রগঠন ও সাম্যনীতি সম্পর্কে সিসেরোর অবদানকে কোনোভাবেই অস্বীকার করা যায় না।

Q) ম্যাকিয়াভেলির রাষ্ট্রতত্ত্ব আলোচনা কর ।

Q) অ্যারিস্টোটলের রাষ্ট্র তত্ত্ব আলোচনা কর। 

Q) চীন বিদ্রোহ 


Post a Comment

0 Comments