Q) ইক্তা ব্যবস্থার বিবর্তন আলোচনা কর। অথবা, দিল্লি সুলতানিতে ইক্তা ব্যবস্থার সংস্কার ও বিবর্তন আলোচনা কর। Class 11 2nd semester

Q) ইক্তা ব্যবস্থার বিবর্তন আলোচনা কর। অথবা, দিল্লি সুলতানিতে ইক্তা ব্যবস্থার সংস্কার ও বিবর্তন আলোচনা কর।


 Q) ইক্তা ব্যবস্থার বিবর্তন আলোচনা কর। অথবা, দিল্লি সুলতানিতে ইক্তা ব্যবস্থার সংস্কার ও বিবর্তন আলোচনা কর।

Q) ইক্তা ব্যবস্থার বিবর্তন আলোচনা কর। অথবা, দিল্লি সুলতানিতে ইক্তা ব্যবস্থার সংস্কার ও বিবর্তন আলোচনা কর।


 মধ্যযুগে ভারতে সুলতানি শাসনকালে ভূমি-রাজস্ব ছিল সম্রাটের আয়ের প্রধান উৎস। আদায়িকৃত রাজস্ব শাসকশ্রেণির লোকেদের মধ্যে বিতরণ করার উপায় হিসেবে এ যুগে এক নতুন ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়। এই ব্যবস্থা 'ইক্তা ব্যবস্থা' নামে পরিচিত। ইতিহাসবিদ ড. ইরফান হাবিবের মতে, "ইসলামের বিধান অনুসারে কৃষকের উৎপন্ন ফসলের উদ্বৃত্তের একাংশ কর হিসেবে গ্রহণ করা হয় এবং তা প্রাদেশিক মুসলিম শাসকদের মধ্যে বণ্টন করা হয়। এই প্রথাকে ইক্তাপ্রথা বলা হয়।"আক্ষরিক অর্থে 'ইক্তা' বলতে 'এক অংশ' বা 'এক ভাগ'-কে বোঝায়। সুলতান ইলতুৎমিস ভারতে ইক্তা ব্যবস্থার প্রচলন করেন। 

∆ সংস্কার ও বিবর্তন :

 ইলতুৎমিস ইক্তা ব্যবস্থা প্রবর্তনের পর থেকে বিভিন্ন সময়ে এই প্রথার সংস্কার ও বিবর্তন ঘটে। 

(১)ইলতুৎমিসের আমল:

সুলতান ইলতুৎমিশের আমলে ইক্তা ব্যবস্থা ছিল জমি বণ্টনের একটি পদ্ধতি, যেখানে সামরিক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ইক্তা (ভূমি) প্রদান করা হতো। ইক্তাদাররা তাদের জমি থেকে রাজস্ব সংগ্রহ করে সুলতানের কাছে পাঠাতেন এবং সৈন্য সরবরাহ করতেন। এটি সামরিক শক্তি বৃদ্ধি এবং কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে সহায়ক ছিল। আবার ইক্তা প্রাপকদের মধ্যে ক্ষমতা দখলের প্রবণতা এবং সুলতানের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। তাই ইলতুৎমিস মুকতিদের অধীন ইকতা জমি বদলি করার নীতি নেন। 

(২) গিয়াসউদ্দিন বলবনের আমল: 

গিয়াসউদ্দিন বলবনের আমলে ইক্তা ব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ সুদৃঢ় হয়। তিনি ইক্তার বিলি বন্দোবস্তের ওপর তদন্ত করে দেখেন যে, ইক্তার প্রাপকরা অনেকেই মৃত বা বার্ধক্যের কারণে সামরিক সেবাদানে অক্ষম। এমন ইক্তাগুলি তিনি অনেকাংশে হ্রাস করেন। তিনি ইক্তার হিসাব রক্ষা ও কেন্দ্রের প্রাপ্য অর্থ কঠোরভাবে আদায় করার নীতি নেন। যাতে ইক্তার প্রকৃত আয়ব্যয় ও উদ্‌বৃত্ত অর্থের সঠিক হিসাব রাখা হয় তার জন্য তিনি 'খোয়াজা' নামে এক শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ করেন। ইক্তাদার যাতে বাধ্যতামূলকভাবে নির্দিষ্ট সংখ্যক সৈন্য রাখে এবং এই প্রথা যাতে বংশানুক্রমিক না হয় সেদিকে বলবন লক্ষ রাখতেন। 

(৩) আলাউদ্দিন খলজির আমল: 

আলাউদ্দিন খলজির আমলে সাম্রাজ্যের আয়তন বৃদ্ধি পেলে ইক্তা ব্যবস্থায়ও বেশ কিছু পরিবর্তন ঘটে। তিনি কেবলমাত্র দিল্লি থেকে দূরবর্তী অঞ্চলগুলিতে ইক্তা ব্যবস্থা বজায় রাখেন এবং দিল্লির নিকটবর্তী অঞ্চলগুলির জমি 'খালিসা' জমিতে পরিণত করে সরকারি রাজস্বের পরিমাণ বৃদ্ধি করেন। প্রতিটি ইক্তার রাজস্বের হার নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। তিনি ইক্তার আয়ব্যয়ের হিসাব নিয়মিত পরীক্ষা এবং দুর্নীতিগ্রস্ত ইক্তাদারদের শাস্তির ব্যবস্থা করেন। কেবলমাত্র সেনাপতিকে ইক্তা দিয়ে সৈন্যদের ইক্তার পরিবর্তে নগদ বেতন দেওয়ার নিয়ম চালু করা হয়। ফলে রাজকোশের আয় বৃদ্ধি পায়।


(৪) গিয়াসউদ্দিন তুঘলক ও মহম্মদ-বিন-তুঘলকের আমল:

 গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের আমলে ইক্তা প্রথায় কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ অনেকটা শিথিল হয়ে পড়লেও মহম্মদ-বিন-তুঘলকের আমলে নিয়ন্ত্রণ আবার বৃদ্ধি পায়। তিনি সর্বোচ্চ পরিমাণ রাজস্ব প্রদানে ইচ্ছুক ব্যক্তিকে ইক্তার রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব দেন এবং সেনাদের নগদ বেতন দেওয়ার নীতি নেন।

(৫) ফিরোজ তুঘলকের আমল:

ফিরোজশাহ আমলে ইক্তাব্যবস্থা তার মূল লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়। তিনি ব্যাপকভাবে ইক্তা বিতরণ করলে খালিসা জমির পরিমাণ কমে যায় এবং সরকারি আয় হ্রাস পায়। এমনকি তিনি ইক্তা ব্যবস্থাকে বংশানুক্রমিক করে দেন।

(৬) লোদি বংশের আমন: 

ফিরোজ শাহ তুঘলক যেভাবে ইতার উপর সুলতানের নিয়ন্ত্রণ শিথিল করেছিলেন তা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। লোদি বংশের শাসনকালে (১৪৫১-১৫২৬ খ্রিস্টাব্দ) ইক্তা ব্যবস্থার নতুন কোনও পরিবর্তন ঘটেনি। তবে এই সময় ইক্তা-র পরিবর্তে সরকার নাম ব্যবহার করা হয়। কয়েকটি পরগনা নিয়ে একটি সরকার গড়ে উঠত। মূলত অনুমানের ভিত্তিতে এসময় প্রত্যেক 'সরকার'-এর মোট রাজস্ব (জমা) দিল্লির দফতর স্থির করে দিত। এই জমা সরকার হিসেবে বিশিষ্ট অভিজাতদের বন্দোবস্ত দেওয়া হত এবং এরই ভিত্তিতে গ্রহীতার দায়িত্ব ও কর্তব্য স্থির করা হত। সরকারের প্রাপক তাঁর প্রাপ্ত ভূখণ্ড ছোটো ছোটো অংশে ভাগ করে ইজারা বন্দোবস্ত দিতে পারতেন।

       সবশেষে, অধ্যাপক আশরাফের মন্তব্যকে দিয়ে আলোচনার পরিসমাপ্তি ঘটানো যায়। তিনি বলেছেন, 'ক্রমাগত একের পর এক দুর্বল সুলতান সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হওয়ার কারণে ইক্তার অধিকারী নিরবচ্ছিন্নভাবে ইক্তাতা ভোগদখলের সুযোগ পেত এবং তার ফলে ওই জায়গির প্রায় তার নিজস্ব ব্যক্তিগত সম্পত্তি হয়ে দাঁড়াত।' ফলস্বরূপ ধীরে ধীরে এই ব্যবস্থা অবসানের পথে এগিয়ে যায়।।

Post a Comment

0 Comments