Q) অ্যারিস্টটল কে ছিলেন? অথবা, অ্যারিস্টটলের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

অ্যারিস্টটল কে ছিলেন?  অথবা, অ্যারিস্টটলের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।




 @ অ্যারিস্টটল কে ছিলেন?

অথবা, অ্যারিস্টটলের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।


বিশ্ব ইতিহাসে প্রথম বাস্তবধর্মী রাষ্ট্রদর্শনের রূপকার হিসেবে গ্রিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অ্যারিস্টটলের (৩৮৪-৩২২ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) অবদান ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। ভারতীয় রাষ্ট্রবিদ কৌটিল্যের সমসাময়িক দার্শনিক অ্যারিস্টটল সর্বপ্রথম রাষ্ট্রনীতিচর্চাকে সমাজবিজ্ঞানের একটি স্বতন্ত্র শাখা (রাষ্ট্রবিজ্ঞান) হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলেন।


∆ অ্যারিস্টটলের সংক্ষিপ্ত পরিচয়:


প্রথম জীবন:

 গ্রিসের সীমান্ত ঘেঁষা ম্যাসিডন নগররাষ্ট্রের স্ট্যাগিরা (Stagira) নামক নগরে এক অভিজাত পরিবারে ৩৮৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে অ্যারিস্টটলের জন্ম হয়। অ্যারিস্টটলের পিতা নিকোম্যাকাস (Nicomachus) ছিলেন একজন চিকিৎসক। পিতার পথ ধরে তিনিও চিকিৎসকের বৃত্তি গ্রহণ করেন। জন্মসূত্রে প্রাপ্ত গ্রিক ও আইওনীয় ঐতিহ্যের উত্তরাধিকার এবং চিকিৎসকের অভিজ্ঞতা তাঁর রাজনৈতিক দর্শনকে প্রভাবিত করেছিল।


প্লেটোর সান্নিধ্যলাভ:

 ১৭ বছর বয়সে অ্যারিস্টটল পিতার সঙ্গে এথেন্সে এসে প্লেটোর সান্নিধ্য পান। প্রায় ২০ বছর অ্যারিস্টটল প্লেটোর অ্যাকাডেমিতে অঙ্কশাস্ত্র, দর্শন, রাষ্ট্রনীতি ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষালাভ করেন। স্বয়ং প্লেটো অ্যারিস্টটলকে তাঁর অ্যাকাডেমির অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রতিভা বলে প্রশংসা করেছেন। খ্রিস্টপূর্ব ৩৪৭ (মতান্তরে ৩৪৮) অব্দে প্লেটোর মৃত্যুর পর অ্যারিস্টটল এথেন্স ছেড়ে চলে যান। এরপর প্রায় ১২ বছরব্যাপী তিনি অন্যান্য কাজে যুক্ত ছিলেন।


আলেকজান্ডারের সান্নিধ্যলাভ:

 ৩৪২ (মতান্তরে ৩৪৩) খ্রিস্টপূর্বাব্দে অ্যারিস্টটল গ্রিকবীর আলেকজান্ডারের শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন। সাম্রাজ্য জয়ের উদ্দেশ্যে আলেকজান্ডার বিভিন্ন দেশ পরিক্রমা করতেন- পাশাপাশি অ্যারিস্টটলও নানা দেশ ভ্রমণ করে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রব্যবস্থা সম্পর্কে অবহিত হওয়ার সুযোগ পান। বলাবাহুল্য, এই প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা অ্যারিস্টটলের রাষ্ট্রচিন্তাকে বিশেষভাবে পুষ্ট করেছিল।


লিসিয়াম অ্যাকাডেমি গঠন: 

প্লেটোর অ্যাকাডেমির অনুকরণে অ্যারিস্টটল এথেন্সে ৩৩৫ (মতান্তরে ৩৩৪) খ্রিস্টপূর্বাব্দ নাগাদ লিসিয়াম (Lyceum) বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় লিপ্ত হন। এই বিদ্যালয়ে দর্শনতত্ত্বের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রায়োগিক বিজ্ঞান, যেমন- প্রাণীবিদ্যা, প্রকৃতিবিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষাদান ও গবেষণার কাজ চালানো হত। এই বহুমুখী শিক্ষাচর্চার পীঠস্থানের পরিচালক হিসেবে অ্যারিস্টটল বহুমুখী বিজ্ঞান ও দর্শনের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পান।


শেষ জীবন: 

ম্যাসিডনের মাটিতে জন্ম হলেও অ্যারিস্টটলের সঙ্গে এথেন্সের ছিল গভীর সংযোগ। পরবর্তী সময়ে তাঁর বিরুদ্ধে নাস্তিকতা ও এথেনীয় গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হলে অ্যারিস্টটল নির্বাসিত হয়ে মায়ের জন্মভূমি চ্যালসিস (Chalcis)-এ চলে যান। সেখানেই খ্রিস্টপূর্ব ৩২২ অব্দে মৃত্যু হয় এই মহান রাষ্ট্রদার্শনিকের।


উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহ:

 অ্যারিস্টটলের বিখ্যাত গ্রন্থ হল The Politics, রাষ্ট্রচিন্তার জগতে যে গ্রন্থের মূল্য অপরিসীম। তাছাড়া প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে অ্যারিস্টটল রচিত গ্রন্থাদির সংখ্যা প্রায় শতাধিক। তর্কশাস্ত্র সম্পর্কিত অ্যারিস্টটলের কয়েকটি রচনা হল- Topics, Prior Analytics, Categories; বিজ্ঞান বিষয়ক গ্রন্থাদির মধ্যে অন্যতম হল- Physics, Growth and Decay, Meteorology; ধর্মসংক্রান্ত রচনা হিসেবে Rhetoric, Poetics প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া অন্যান্য দার্শনিক রচনাগুলির মধ্যে Nicomachean Ethics, Metaphysics গ্রন্থগুলি হল অন্যতম।

Post a Comment

0 Comments