মোবাইল ফোন ইন্টারনেট ব্যবস্থা কিভাবে যুবসমাজকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে ???



মোবাইল ফোন ইন্টারনেট ব্যবস্থা কিভাবে যুবসমাজকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে :-


 প্রযুক্তি বিশ্ব মানুষকে সৌখিন এবং বিলাসী হতে শিখিয়েছে। অবস্থা এমন যে হাতে একটি মোবাইল থাকলেই বিশ্বের যে কোন খবর মুহূর্তের মধ্যেই চোখের সামনে ভেসে উঠবে। মোবাইলে একটা ছোট্ট কম্পিউটার প্রোগ্রাম আপনার গোটা জীবনধারণ পদ্ধতিই বদলে দিচ্ছে। এখন চাইলেই আপনার হাতের মোবাইল ফোনটিতে বিভিন্ন এ্যাপ্লিকেশন আপনার প্রয়োজনীয় সব ধরনের তথ্য দিয়ে দেবে। টুকিটাকি সমস্যাগুলো নিয়ে মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হবে না। একটি মোবাইল সেট হাতে থাকলেই যে কেউ ইন্টারনেট থেকে নামিয়ে নিতে পারবে মানচিত্র।

মোবাইল ফোন ইন্টারনেট ব্যবস্থা কিভাবে যুবসমাজকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে



একজন দক্ষ ট্যুরিস্ট গাইডের মতো পথ দেখাবে হাতের মুঠোয় থাকা মোবাইল ফোনসেটটি। তরুণ সমাজের কাছে মোবাইল ফোন এখন শুধু যোগাযোগের কোন মাধ্যম নয়, বরং সময় কাটানো এবং বিনোদনের এক সহজ উপকরণ। প্রায়ই দেখা যায় বাসে কিংবা ট্রেনে বসে যাতায়াতের সময় কেউবা নিজের পছন্দমতো গান শুনছেন কিংবা ফেসবুকে বসে সময় কাটাচ্ছেন আবার কেউ ঘণ্টার পর ঘণ্টা আপনজনের সাথে কথা বলছেন। কিন্ত অনেকেই জানেন না হাজারো সুবিধা দেয়া এ মোবাইলই জনস্বাস্থ্যের জন্যে ক্ষতিকর অনেক কিছু করে দিতে পারে। এ নিয়ে বিশ্বব্যাপী চলছে গবেষণা।     





 ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, ভিন্নরূপে খুব সীমিত পরিসরে প্রথম মোবাইল ফোনের ব্যবহার হয়েছে জার্মানিতে প্রথম মহাযুদ্ধের পর ১৯২৬ সালে। তবে ওই ফোন বলতে গেলে শুধু সেনাবাহিনীর লোকজনই ব্যবহার করত। বিশেষ প্রশিক্ষণ ছাড়া সাধারণ মানুষের পক্ষে ওতে কথা বলা মোটেও সম্ভব ছিল না। আজকাল মোবাইল ফোন বলতে আমরা যা বুঝি, এর ব্যবহার শুরু হয় ১৯৭০ দশকের গোড়ার দিকে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান (নরওয়ে, সুইডেন, ডেনমার্ক ও ফিনল্যান্ড) দেশগুলোতে।       



মোবাইল ফোন ইন্টারনেট ব্যবস্থা কিভাবে যুবসমাজকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে


দেশে এবং আমেরিকায় এর জনপ্রিয়তা বেড়ে ওঠে একটু পরে। দুই দশক মোবাইল ফোন ব্যবহারের পর স্ক্যান্ডিনেভিয়ান অঞ্চলের স্বাস্থ্য বিভাগে যে সাধারণ প্রশ্ন দেখা দেয় তা হলো মোবাইল ফোনের ব্যবহার জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কিনা? এর ব্যবহারের সঙ্গে ব্রেন টিউমার বা অন্য কোন ধরনের ক্যান্সারের কোন যোগসূত্র আছে কিনা? এ প্রশ্নগুলো সামনে রেখে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোয় ১৯৯০-এর দশকে বেশ কয়েকটি গবেষণা জরিপ চালানো হয়। প্রথমদিকে সব ক'টি জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, মোবাইল ফোন ব্যবহার স্বাস্থ্যের জন্য কোনভাবেই ঝুঁকিপূর্ণ নয়। ১৯৯৫ সালে ড্যানিশ ইন্সটিটিউট অব ক্যান্সার এপিডেমিওলজি একটি বড় ও ব্যাপক গবেষণা প্রকল্প হাতে নেয়। এ গবেষণার উপসংহারেও একই কথা বলা হয়, অর্থাৎ মোবাইল ফোন ব্যবহারের সঙ্গে ব্রেন টিউমার বা ক্যান্সারের কোন সম্পর্ক নেই।   




মোবাইলফোনের ব্যবহার দিনে দিনে দ্রুত বাড়তে থাকে এবং অল্পদিনের মধ্যে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে পৃথিবীর এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি লোক মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। বেশিদিন মোবাইল ফোন ব্যবহারে কোন স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই- এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আগে বলে থাকলেও ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর রিসার্চ অন ক্যান্সারের এক গবেষণা জরিপে কিছুটা আশঙ্কাজনক ফলাফল দেখা যায়। এ জরিপে সাড়ে ৪ হাজার মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী অংশ নেয়। তাদের মধ্যে প্রান্তিকভাবে মাথার যেদিকে মোবাইল ফোন ব্যবহার করা হয়, সেদিকে ব্রেন টিউমারের একটি ইতিবাচক আলামত দেখা যায়। এ ফলাফল উন্নত বিশ্বে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে ব্যাপকভাবে ক্যান্সার-গবেষণার জন্ম দিয়েছে। 

মোবাইল ফোন ইন্টারনেট ব্যবস্থা কিভাবে যুবসমাজকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে


আরেক গবেষণায় দেখা যায়, যেসব পুরুষ দিনে চার ঘণ্টা মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন, তাদের মধ্যে প্রজনন ক্ষমতা কমে যাওয়ার লক্ষণ দেখা যায়। যারা ছয় ঘণ্টা মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন, তাদের প্রজনন ক্ষমতা স্বাভাবিক পুরুষদের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশ কমে যায়। অন্য বেশ কয়েকটি গবেষণা জরিপে মোটামুটি একই রকম ফলাফল দেখা যায়। যেসব যুবক প্যান্টের পকেটে অথবা কোমরে বেল্টের সঙ্গে মোবাইল ফোন ঝুলিয়ে চলাফেরা করেন, তাদের মধ্যেও প্রজনন ক্ষমতা কমে যাওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই ফলাফলের সপক্ষে হাঙ্গেরির সাগোদা ইউনিভার্সিটি থেকে সম্প্রতি প্রকাশিত আরেকটি গবেষণা রিপোর্টে সমর্থন পাওয়া গেছে। গবেষণায় দেখা যায়, মোবাইল ফোন থেকে অনবরত রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি রেডিয়েশন বের হয়, যা মানুষের হার্টের জন্য ক্ষতিকর। আর তাই শার্টের বুক পকেটে মোবাইল ফোন রাখা একেবারেই নিরাপদ নয়।      



মোফোন ব্যবহারকারীর মুখের থুতু কিংবা লালা ফোন সেটের কি-প্যাডের ওপর পড়ে থাকলে থারমাল রেডিয়েশনের ফলে মারাত্মক ধরনের ব্যাক্টেরিয়া জন্ম নিতে পারে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য কোন কোন সময় হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। মোবাইল ফোন ব্যবহার থেকে যে তাপ বের হয় তা চোখের জন্যও খারাপ। আমেরিকার ওয়েন স্টেট ইউনিভার্সিটি ও আইটিআইএস ইন্সটিটিউট এবং সুইডেনের উপ্সালা ইউনিভার্সিটি ও কারালিন্সক্ ইন্সটিটিউটের যৌথ গবেষণায় বলা হয়েছে, মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলে অনেকের মধ্যে দীর্ঘকালীন মাথাব্যথা, মাথা ঘোরানো, ক্লান্তিবোধ ইত্যাদি উপসর্গ আকারে দেখা যায়। বছর দুয়েক আগে একটি ফরাসি সরকারি এজেন্সি ছোট ছেলেমেয়েদের হাতে মোবাইল ফোন দিতে নিষেধ করেছেন। এছাড়াও পরোক্ষভাবে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের ওপর মোবাইল ফোনের বিরূপ প্রভাব রয়েছে। পুরনো ও অব্যবহূত কোটি কোটি মোবাইল ফোন পরিবেশের জন্য এক মারাত্মক নতুন ঝুঁকি সৃষ্টি করে। উন্নত বিশ্বে গাড়ি চালাতে চালাতে মোবাইল ফোনে কথা বলার কারণে প্রতিদিন ঘটছে অসংখ্য দুর্ঘটনা এবং এতে মারা যাচ্ছে প্রচুর লোক। মাকিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহারের বিপক্ষে আইন পাস হচ্ছে। এত কিছুর পরও পৃথিবীতে মোবাইল ফোন ব্যবহার বন্ধ করা যাবে না, এমনকি কমানোও যাবে না। বরং এর ব্যবহার দিনে দিনে বাড়বে, কারণ এখনও এর উপকার অপকারের চেয়ে অনেক বেশি। 



এখান
পরিবেশের ওপর এমনিতেই অনেক চাপ ও ঝুঁকি রয়েছে। মোবাইল ফোন ব্যবহার থেকে আগামী দিনে যাতে কোনরকম বাড়তি চাপ না আসে, সে ব্যাপারে আগে থেকেই সরকার, বেসরকারি সংস্থা এবং জনগণের সাবধান হওয়া দরকার এমনটিই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

Post a Comment

1 Comments

If you like the posts, you must comment. and if there is any problem , please let me know in the comments.